আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকায় বাজারে নকল পন্যের ছাড়াছড়ি

মনি ইসলাম:

বর্তমানে আধুনিক তরুণীদের রূপ চর্চা করার বিশ্বস্ত জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন বিউটি পার্লার। বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তরুণীরা সাধারণত বিউটি পার্লারে লিপস্টিক, লিপ লায়লার, আইলেনার, মার্সকারা, আইসেট, কাজল, ফাউন্ডডিশন, সাইনিং মেকআপ, এবং ত্বকের ধরন বুঝে বিভিন্ন ধরনে মেকআপ ইত্যাদি প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে।

ফেসিয়ালের জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনে ফেসিয়াল ক্রীম যেমন, নিম ফেসিয়াল,গোল্ডেন ফেসিয়াল। ফেসিয়াল ক্রীমগুলোর মধ্যে হলো, মার্সাস ক্রীম, এলোব্রেরা ক্রিম, নিম ক্রিম,ম্যাংগো ক্রিম, স্ক্যাব ক্রিম, ব্যানানা ক্রীম, রোজ ক্রীম ইত্যাদি।

সাধারণত ২৫০ থেকে ক্রীমগুলো ১০০০ গ্রামের হয়ে থাকে। তবে মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারনায় মেতে উঠেছে বিভিন্ন পার্লার। বাড়তি মুনাফার লোভে মানুষের ত্বক ও স্বাস্থ্য ঝঁকিতে ফেলে রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করছে বিভিন্ন পার্লার। তরুণ Ñতরুনীসহ সব বয়সের মানুষের বিশ্বস্ত বিউটি পার্লার কিন্তু বিশ্বাস আর সরলতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন পার্লার প্রতিষ্ঠান গুলো মানুষকে ঠকাচ্ছে বলে জানা যায়।

পার্লারগুলো রুপসজ্জায় যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করছে তার বেশিরভাগই নকল। দেশের তৈরি এসব পন্য বিদেশি বলে প্রতারনা করছে। মানুষের ত্বক ও স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের ব্যবহার করা বেশির ভাগ পন্য মেয়াদ ফেল। অনেক পন্যের গায়ে উৎপাদনের তারিখও নেই। তারা মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে কিন্তু ভোক্তাদের যথাযথ সেবা দিচ্ছে না এমন অভিযোগ অনেক গ্রহকের ।

বিভিন্ন মার্কেটে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে লেকমি ব্র্যান্ডের কাজল (লেকমি)। বিক্রেতার ভাষ্য, পণ্যটি সরাসরি ভারত থেকে আমদানি করা। অথচ এর গায়ে দাম লেখা ১৮০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা)।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১০০ টাকার মূল্যমান ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮০ রুপি। প্রসাধন সামগ্রী বিক্রেতার সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা যাবে না। হাতে গোনা যে কয়টি দোকানে প্রকৃতই বিদেশি প্রসাধনী পাওয়া যায়, সেখানে এই রুপি-টাকার মূল্যমানের বিপদ। নকল পণ্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি দামে আসল পণ্য কেনার চেষ্টা করেন ক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।

ক্রেতা ঈশিতা সংবাদ চর্চাকে বলেন, ‘অধিকাংশ মার্কেটে ভুয়া জিনিস বিক্রি করে। এখন ডাবল দাম দিয়ে হলেও ভালো জিনিসটি নেওয়ার চেষ্টা করি। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেখি ভুয়া কসমেটিকসে সব বাজে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ভয়ে থাকি।

একই ব্র্যান্ডের দেশভেদে উৎপাদনের মূল্যের তারতম্য আছে। সেই সুযোগও নেয় বিক্রেতারা। দেশে বেশ চাহিদা আছে এমন বিদেশি নামি ব্র্যান্ডের কয়েকটি পণ্য উৎপাদন হয় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। দেশভেদে পণ্যের গুণগত মানের পার্থক্য রয়েছে এমন যুক্তিতে ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে অন্য দেশের পণ্যের প্রতি। তার সুযোগ নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

বাংলাদেশে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বিক্রি করছে ইউনিলিভার। একই প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করছে পাশের দেশ ভারতে। ৯৫ টাকায় দেশে বিক্রি হওয়া ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ভারতে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ রুপিতে। কিন্তু ভারতে উৎপাদিত পণ্যটি বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-২১০ টাকায়।

কোথাও ভারতীয় পণ্যের কথা বলে ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একই রকম দেখতে ভুয়া পণ্য। নামি ব্র্যান্ডের মোড়ক হুবহু তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত দামে। তবে দাম দিয়ে কিনলেও দেশির চেয়ে বিদেশি পণ্য বেশি কার্যকর বলে জানান সুর্বনা নামের একজন ক্রেতা। তাই বাড়তি দাম গুনতে কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। তিনি বলেন, ৯৫ টাকার ১০টা ব্যবহার করলে যে কাজ করে, ইন্ডিয়ানটা ২০০ টাকা দিয়ে একটা কিনলে সেই একই কাজ করে। তবে তার ভয় আসল-নকলের ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়া।

সুর্বনা তার ভয়ের কারন জানায় সংবাদচর্চাকে। নকলের পাল্লায় পড়ে তার বান্ধবীকে কী মূল্য দিতে হয়েছে সেটি তিনি দেখেছেন। সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বান্ধবী একটা ক্রিম কিনেছিল টপটেন থেকে। গৌরি নাইট ক্রিম। ক্রিমটা পাকিস্তানের বলে ওর কাছে বিক্রি করে বিক্রেতা। চার-পাঁচদিন ব্যবহার করার পর দেখা গেল ওর চেহারা পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় পুড়ে গেলে যেমন হয় তেমন সাদা হয়ে গেছে। অথচ ও এর আগেও এই ক্রিম ব্যবহার করেছে, তখন এমন কিছু হয়নি। আমার বান্ধবী বুঝতে পারে তার সংগ্রহ করা ক্রিমটি ছিলো নকল।

নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন এলাকার প্রসাধনীর দোকান ঘুরে পাওয়া যায় সুর্বণা বলা গৌরি ক্রিম। ক্রিমটি ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসে বলে জানান দোকানিরা। পণ্যটির গায়ে দাম লেখা ৩০০ রুপি। স্থানভেদে এটি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। টেলিভিশনে ফেয়ার লুক ফর্সা হওয়ার জন্য লেশন ক্রিম বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। যার মূল্য দেওয়া আছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।

ক্রেতা সালিমা বলে, আমি আসল স্কীন ক্রিম যথন প্রথম কিনি তখন স্কীন ক্রিম টা ভালো পেয়েছিলাম তার পর থেকে সেই ক্রিম এর মত একটি ক্রিমও ভালো পেলাম না । আমি গত কয়েক মাসে ডিআইটি মার্কেট, ফেন্স মার্কেট, শান্তনা মার্কেট, খাজা মার্কেট এমনকি ১নং রেল গেট থেকে এসব কসমেটিক্স দোকান থেকেও স্কীন ক্রিমটা কিনে ছিলাম কিন্তু প্রথম ক্রিমটার মত এত ভালো ফলাফল পাইনি ।

নকল পন্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক বলেন, আমাদের গত রবিবার নকল প্রসাধনী উপর অভিযান করার কথা ছিল কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারনে অভিযান করা সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যুথিকা সরকার বলেন, আমরা যেখানে কোনো নকল প্রসাধনীর বিষয় নিয়ে অভিযোগ পাই, তখন আমরা সেখানে অভিযান করে থাকি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে। আর আমরা নকল প্রসাধনীর উপর প্রতি মাসে একবার অভিযান করে থাকি।

সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত ঘটনার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই। দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহন করলে হয়তো নগরীর দোকানগুলোতে এতো পরিমান নকল পন্য সয়লাভ করতো না! সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।